হেই আই অ্যাম স্কেয়ার্ড!!! বলতেই ডাইনি ছুঁড়ি কোমরে হাত দিয়ে এমন এক চাহুনি দিলো যে হাসি চলে এলো। তার মাথার চুল সাদা।
নিউইয়র্কের সড়কে সড়কে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের দেখা মিলেছে। কেউ বড় ভূত, কেউ ছোট ভূত, কেউ বুড়ো ভূত, কেউ কুঁজো ভূত, কেউ লাঠির মতো সটান ভূত। কেউ আবার রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার। মুখের দুই দিক দিয়ে রক্ত বেয়ে নামছে। কারো দাঁত দুপাটি আকর্ণ বিস্তৃত। কারও মুখের হা নাসিকার উপর থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে। এখানেই শেষ নয়, কেউ সেজেছে ডাইনোসর কেউ বা গডজিলা। কেউ অতিকায় ভয়ঙ্কর আরও কোনও প্রাণী। সবমিলিয়ে ভূত-প্রেতের আনাগোনায় ভীতির নগরী হয়ে উঠেছিলো গোটা নিউইয়র্ক। আসলে কেবল নিউইয়র্ক নয় সোমবার একই অবস্থা ছিলো গোটা আমেরিকার।
কেনো হবে না। আজ যে হ্যালোইন অথবা হ্যালোউই-ইন (মূলত হ্যালোস' ইভনিং)। কেউ বলেন অলহ্যালোউইন। সব ভূত প্রেতের সন্ধ্যা। প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর দিনটি উদযাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রই কেবল নয় আরও কিছু দেশের নগরে নগরে এই সন্ধ্যাটি হয়ে ওঠে ভূত-প্রেতদের।
"অল হ্যালোজ' ইভ"-এর সংক্ষিপ্ত রূপ এই হ্যালোইন। এটি একটি বার্ষিক উদযাপন।
বর্ষা ও শীতের সন্ধিক্ষণের এই দিনটিকে প্রাচুর্য ও অভাব, জীবন ও মৃত্যুর মাঝামাঝি কিছু বিবেচনা করা হয় আর সেই দিন ধরাধামে নেমে আসে প্রেতাত্মারা নানা রূপে, নানা ভঙ্গিমায়। প্রাচীন কেলটিক ফেসটিভাল থেকেই এই উৎসবের জন্ম।
প্রায় দুই হাজার বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে ছিলো এই কেলটিক জাতির বাস। অক্টোবরের শেষ দিনের সন্ধ্যাটিকে তারা মনে করতো সবচেয়ে খারাপ সময়। এ সময় সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মা ধরাধামে নেমে আসে। এই ভূত-প্রেতরা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। সে কারণে তাদের হটিয়ে দিতে মানুষরা নিজেরই নানা রকম ভূতের মুখোশ ও ভূতের কাপড় পরে থাকতো। পরে ধীরে ধীরে বিষয়টি উৎসবে পরিণত হয়।
এই দিন সকাল থেকেই ছোট ছোট শিশুরা হ্যালোইনের কস্টিউম পরে নানা ধরনের ভূত-প্রেত সেজে ঘুরতে থাকে। ঘরে ঘরে, দোকান-পাটে গিয়ে হানা দেয়। আর বলে ট্রিক অর ট্রিট। হয় আমাকে কৌশলে ধরো নয়তো খেতে দাও। এসময় শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্যান্ডি। দিনভর ঘুরে ঘুরে ক্যান্ডি তুলে ঝুড়ি ভরে ফেলে শিশুরা। আর সন্ধ্যায় তারা নামে ভূত-প্রেতাত্মার মিছিলে।
ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়াও দিনটি উদযাপিত হয় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডেও।
একটি তথ্য বলছে, দিনটি এমনকি ঘটা করে পালন করে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)ও। এদিন ভূত সেজে ট্রিক অর ট্রিট করে যে ক্যান্ডি তোলে শিশুরা সেগুলো পরে বিতরণ করা হয় অসহায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে।
তবে এদিন আসলে মজা করে ক্যান্ডি খাওয়ার দিন। এই দিন নেই বাবা-মায়ের মানা। ফলে হ্যালোইনের মিছিলে শিশুদের দেখা গেলো ক্যান্ডি চিবুচ্ছে আর সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে।
শিশুদের এই আনন্দ উৎসব কারো কারো হয়তো পছন্দ নয়, তাই তারা ওদের ক্যান্ডি দিতে চাননা। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একাধিক দোকানে দেখা গেলো লেখা রয়েছে- সরি... নো ক্যান্ডি। এসব দোকানে শিশুরা ঢোকেনা। আবার অনেক দোকান থেকে তাদের ক্যান্ডি না পেয়ে মন খারাপ করে বের হয়ে আসতেও দেখা গেছে। আর এটাও দেখা গেছে কেউ কেউ ডেকে ডেকে আদর করে শিশুদের ঝুড়িতে পুরে দিচ্ছেন মুঠো মুঠো ক্যান্ডি আর চকোলেট।
আরও পড়ুন
** কোমে বোমায়ও হিলারি অটল, অপ্রতিরোধ্য
** শ্বেতভবনের বাসিন্দা কে হবেন? কে যোগ্য!
** হুমাকে নিয়ে সংকটে হিলারি!
** হিলারিকে ভোট দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটনের বাংলাদেশি কমিউনিটি
** নির্বাচনী জরিপের চড়াই-উতরাই, কনফিউজড অনেকেই
** নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে
** আর্লি ভোটে আর্লি তুষারপাত, মূল ভোটে কি হবে!
** মুসলিম ডেমোক্র্যাটরা সক্রিয়, রয়েছেন বাংলাদেশিরাও
** বোস্টনে ভোট ক্যাম্পেইনের এক উপভোগ্য সন্ধ্যা
** বোস্টনে মিললো ভোটের বিলবোর্ড
** হিলারির জন্য প্রচারে আমেরিকান মুসলিমদের র্যালি রোববার
** জ্যাকসন হাইটসের আড্ডায় ট্রাম্প আতঙ্ক
** বহু জাতির দেশে বহুমুখী ভোট, বহু তার সমীকরণ
** আবহাওয়া ঠাণ্ডা, ভোটের হাওয়া কী গরম!
** অদ্ভুত এক নির্বাচনের দেশে!
** প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাভার করতে বাংলানিউজ’র মেনন যুক্তরাষ্ট্রে
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৬
জেডএস/এমএমকে